সমস্ত লেখাগুলি

ভারতের মুসলমান সমাজ ও তাদের জিনোম -
মধুশ্রী বন্দ্যেপাধ্যায়
Nov. 20, 2024 | যুক্তিবাদ | views:285 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ভারতীয় মুসলমানরা কি এদেশীয় নাকি তারা দেশের বাইরে থেকে এসেছেন - এই নিয়ে আজও বিতর্ক চলেছে। অথচ এই বিষয়ে জিনবিদ্যার গবেষণা অন্তত ১৫ বছর ধরে চলেছে এবং সকলে প্রায় একই সিদ্ধান্তে এসেছেন।

পুরুষদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়াই-ক্রোমোজোম ডিএনএ ডেটা থেকে ১৫ বছর আগে একদল বিজ্ঞানী সিদ্ধান্তে আসেন যে, পিতৃক্রমের দিক দিয়ে ভারতীয় মুসলমানরা মূলতঃ আঞ্চলিক প্রতিবেশী হিন্দুদের থেকে ধর্মান্তরিত। তবে ভারতীয় শিয়াদের মধ্যে আফ্রিকান ও মধ্য প্রাচ্যের ‘ওয়াই-ক্রোমোজোম ডিএনএ’-র এক বিশেষ মিউটেশনের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আছে। ওয়াই-ক্রোমোজোম ডিএনএ পুরুষের শুক্রাণুতে পাওয়া যায়। শিয়াদের এই মার্কার প্রমাণ করে, সম্ভবত একটা জিন প্রবাহ অর্থাৎ মাইগ্রেশন হয়েছিল মধ্য এশিয়া থেকে ভারতবর্ষে। এটি সুন্নিদের মধ্যে অনুপস্থিত।

২০১০ সালে আবার গবেষণা করে দেখা যায় যে, ভারতীয় মুসলিমদের জিনোমিক প্রোফাইল ভৌগোলিকভাবে পার্শ্ববর্তী অমুসলিমদের সঙ্গেই মেলে। তবে সামান্য পরিমাণে আফ্রিকা, আরব ও পশ্চিম এশিয়া থেকে জিন প্রবাহ এসেছে। শেষ পর্যন্ত এখানেও একই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে যে, ভারতবর্ষে ইসলাম কোন ব্যাপক বহিরাগত জিন প্রবাহ নিয়ে প্রবেশ করেনি। সামান্য মানুষ ওই অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।

প্রায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোনমিং ঝাও ও তার সহকর্মীরা। ওরা দেশীয় শিয়াদের মধ্যে সনাক্ত করেন এক বিশেষ ওয়াই-ক্রোমোজোম ডিএনএ। এটি সুন্নিদের মধ্যে পাওয়া যায় না। শিয়াদের মধ্যে এই ডিএনএ-র উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, মুসলিমদের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু জিনগত পার্থক্য আছে।

আবার বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভারতীয় মুসলিমরা মাতৃক্রমের দিক দিয়ে দেশের বাইরের লোকদের সঙ্গে নয় বরং অন্যান্য ভারতীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনীয়। তারা মাতৃক্রমে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। 

সত্যি কথা বলতে, ভারতবর্ষের যে কোন ধর্ম, বর্ণের মানুষের সংখ্যাগুরু অংশ মাতৃক্রমে সেই ৬৫ হাজার বছর আগের আফ্রিকা থেকে আগত নারীদের বংশধর। 

অর্থাৎ পরে যে মূল মাইগ্রেশনগুলো হয়েছিল, যেমন ইরানের শিকারি-সংগ্রাহক, বা ইন্দো ইউরোপীয় বা অস্ট্রো-এশিয়াটিক - তাদের মধ্যে নারী ছিল কম। অস্ট্রো-এশিয়াটিক মাইগ্রেশনের সময়ে ওদের মধ্যে নারী প্রায় অনুপস্থিত ছিল। একমাত্র তিব্বতি-বর্মীদের মধ্যে কিন্তু নারী পুরুষ প্রায় সমান হারে এসেছিল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, ভারতীয় মুসলমানরা যদিও হিন্দু বর্ণপ্রথা অনুসরণ করেন না তবে তারাও নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিয়ে সীমাবদ্ধ রাখেন। অর্থাৎ সুন্নি এবং শিয়ারা নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যেই বিয়ে করতে পছন্দ করেন। 

দেশজুড়ে মুসলমানদের নিয়ে একাধিক গবেষণায় জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, ভারতে ইসলামের বিস্তার মূলতঃ একটি সাংস্কৃতিক সংশ্লেষ, মুসলিম বিশ্ব থেকে জিন প্রবাহের প্রমাণ তেমন পাওয়া যায় না। ভারতীয় মুসলমানরা ক্ষত্রী, কুর্মি, ব্রাহ্মণ এবং ঠাকুরদের মতোই ভারতীয়।

মুসলিমরা ততটাই ভারতীয় যতটা হিন্দুরা। 

বাঙালি মুসলিমরা ততটাই ভারতীয় যতটা বাঙালি  হিন্দুরা। 

বাঙালি মুসলমানের এই দেশ, এই ভাষা, এই খাবার, এই নদী, এই পাহাড়, এই আকাশ, এই বাতাসের ওপরে ততটাই অধিকার ও দায়িত্ব থাকে যতটা আছে পাশের হিন্দুদের। 

এই তথ্য আশা করি মুসলমানদের মধ্যে প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। মুসলমানদের দেশের প্রতি অধিকার ও কর্তব্য তার পাশের হিন্দুদের থেকে একবিন্দু কম নয়।

অবশ্য যদি তারা সকলে বাইরে থেকে আসতেন তবুও কিন্তু অধিকার ও কর্তব্য কমত না। কারণ তারা এই দেশটাকে নিজের বাসস্থান করে নিয়েছেন। যেমন নিয়েছিল ৩৫০০ বছর আগে স্তেপভূমির ইন্দো-ইউরোপীয়রা বা ৫০০০ বছর আগে অস্ট্রো-এশিয়াটিকরা।

কিন্তু ব্রিটিশ বা পর্তুগিজ বা ফরাসিরা তা নেয়নি। তারা রাজ্য শাসনের অবসান হতেই পোটলা গুটিয়ে চলে গেছে। 

এটা তাদের দেশ নয়।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929